ফিতরা বা ফেতরা(فطرة) আরবি শব্দ, যা ইসলামে জাকাতুল ফিতর (ফিতরের জাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোজাদারা রোজা ভঙ্গ করেন। (আল মুজাম আল ওয়াসিত, পৃষ্ঠা ৬৯৪)।
জাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে জাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের জাকাত বলা হয়। (ফাতহুল বারী ৩, পৃষ্ঠা ৪৬৩)।
নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ইবনে ওমর (রা.) থেকে জানা যায়,
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم- زكاة الفطر صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير، على الذكر والأنثى والصغير والكبير والحر والعبد من المسلمين، وأمر أن تؤدى قبل خروج الناس للصلاة” متفق عليه
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব। তিনি লোকদের ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)।
ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তার নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তার প্রতি ওয়াজিব।
যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাদের জন্যও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। একে অন্যের ফিতরা আদায় করতে পারবেন। সুবিধার জন্য রমজানেও ফিতরা আদায় করা যায়। যাদের জাকাত দেয়া যায়, তাদের ফিতরাও দেয়া যায়। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু কিনেও দেয়া যায়। পিতা, মাতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলে, মেয়ে ও অধঃস্তন এবং যার ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে (যেমন স্ত্রী), তাদের ওয়াজিব ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না।
যে ব্যক্তির নিকট ঈদের দিন তার ও তার পরিবারের খাদ্য-খোরাক বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই সঙ্গে ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা ফিতরা ওয়াজিব করেছেন। অর্থাৎ কারো কাছে একদিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান থাকলে তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে ফিতরা আদায় করে নিতে হবে। আর বাড়ির কাজের লোক বা চাকর-চাকরানীদের জন্য ফিতরা দেয়া বাড়ির মালিকের জন্য আবশ্যক নয়। তবে গরীব মানুষ হিসেবে ফিতরা দিলে সওয়াব পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে মালিক নিজের ও নিজ পরিবারের যেভাবে ফিতরা দিবে সেভাবেই বাড়ির কর্মচারীদের ফিতরা দিবে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণনা, নবী করিস (সা.) এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪)। তিনি আরো বলেন, আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন: এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বুখারী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ২০৫)।
একবার মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) ওমরাহ করার জন্য এলেন। তিনি জনগণের উদ্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি আলোচনা করলেন সে বিষয়, যে বিষয়ে মানুষ প্রশ্ন করেছে। তিনি বললেন, আমি দেখছি শামের দুই মুদ (নিসফ সা বা পৌনে দুই কেজি) আটা সমান হয় (মূল্যমান হিসাবে) এক সা (সাড়ে তিন কেজি) খেজুরের। অতঃপর মানুষ (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়ীরা) এই মত গ্রহণ করলেন। (মুসলিম, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩১৭-৩১৮)। হাসান বসরি (রহ.) বর্ণনা করেন, আলী (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ যখন তোমাদের প্রাচুর্য দিয়েছেন তোমরাও উদার হও, গমও এক সা দাও।’ (নাসায়ি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৬৮-২৭০)।
হজরত ইমাম আযম (রহ.) এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা শ্রেয়। অন্য সব ইমামের মতও অনুরূপ। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মতে, সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এর অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। এ ছাড়া সদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহর ঐকমত্য হলো, ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী।’ (আল মুগনি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২১৯; আওজাজুল মাসালিক শরহে মুআত্তা মালিক, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১২৮)।
মুজতাহিদ ফকিহদের মতে, যেখানে যা প্রধান খাদ্য তা দ্বারা আদায় করা শ্রেয়। মুজতাহিদ ইমামদের মতে, যেসব খাদ্যবস্তু (ক) সহজে সংরক্ষণযোগ্য, (খ) সহজে বিনিময়যোগ্য ও (গ) বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে; সেসব খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, চালের মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং সৌদি আরবসহ সব আরব দেশ এবং প্রায় সব মুসলিম দেশ বর্তমানে চালের হিসাব গ্রহণ করেছে।
বিভিন্ন দামের খাদ্যবস্তু রয়েছে, এর মধ্যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায় করা হবে? উত্তম হলো সর্বোচ্চ মূল্যের খেজুর বা চালের মূল্যে আদায় করা। তবে ধনীরা সর্বোচ্চ এবং সাধারণরা মাঝামাঝি মূল্যে আদায় করাই শ্রেয়। ইনসাফ হলো, যারা যে চালের ভাত খান বা যারা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তারা সে সমমানের বা সমমূল্যে ফিতরা আদায় করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তা-ই উত্তম, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারী, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৮৮)।
from Tuneshut https://ift.tt/3dbf87M
bangla,bangla tech,bangla tech s,bangla news,bangla tutorial,tech bangla it,tech bangla,bangla tech channel exposed,tech bangla pro,bangla tech channel roasted video,bangla tv channel,bangla channels,in bangla,bangla movie,bangla news 24,bangla review,bangla boy,news bangla,new tech,tech,tyag bangla movie,shaj tech,news bangla 24,debtech bangla channel,like app bangla,bangla android,bangla tutorial idm, bangla,bangla funny video,bangla movie,bangla new movie,funny facebook posts,new bangla funny video,funniest facebook posts,post office,bangla natok,bangla movie song,bangla facebook post,bangla tutorial,new bangla natok,bangla full movie,bangla cinema,bangla dhadha,bangla natok post mortem,bangla funny facebook post,bangla motivational video,bangla facebook funny,facebook post,facebook funny post, Credit Tuneshut -
0 Comments